কারাতে শুধুমাত্র আত্মরক্ষার জন্য একটি মার্শাল আর্ট নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনশৈলী ও জীবনের অংশ ও বটে।কেননা আজকের দুনিয়ায় যেখানে আত্মবিশ্বাস, শৃঙ্খলা ও মানসিক শক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে কারাতে শেখা এক অসাধারণ সিদ্ধান্ত হতে পারে।
কারাতে শেখার উপকারিতা নিয়ে আজকের আলোচনায় আমরা জানানোর চেষ্টা করবো বর্তমান সময়ে কারাতে কেন প্রয়োজন ও কি কি কারণে প্রয়োজন, কারাতে শিখলে কি কি উপকার হবে, কি কি সুবিধা পাবে এবং কারাতে কত প্রকার ও কি কি সহ কারাতে নিয়ে সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কারাতে কি?
কারাতে শব্দের অর্থ “খালি হাতে যুদ্ধ”। এটি জাপানের ওকিনাওয়া থেকে সৃষ্টিএকটি আত্মরক্ষামূলক কৌশল, যেখানে শরীরের প্রতিটি অংশকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় হাত, পা, কনুই, হাঁটু এমনকি মন ও। কারাতে অনুশীলনকারীকে বলা হয় “কারাতেকা”।
কারাতে কত প্রকার?

স্বাভাবিক ভাবে কারাতের বিষয়ে কথা হলে একটা বিষয় প্রায় শোনা যায় সেটা হচ্ছে কারাতে কত প্রকার ও কি কি। কারণ টিভিতে আমরা বিভিন্ন ধরনের কারাতে বা মারামারি দেখে থাকি বিশেষ করে সিনেমা গুলো তে। তাই কোনটা আমাদের শিখা উচিত বা কিভাবে শেখা উচিত তা নিয়ে নানান প্রশ্ন আসে।
সাধারণভাবে, চারটি মূলধারার কারাতে রয়েছে:
- শোটোকান (Shotokan) – শক্তিশালী পাঞ্চ ও কিকের জন্য বিখ্যাত।
- গোজুরিউ (Goju-Ryu) – হার্ড এবং সফট মুভমেন্টের মিশ্রণ।
- শিতোরিউ (Shito-Ryu) – দ্রুত কাতা এবং ভারসাম্যপূর্ণ স্টাইল।
- ওয়াদোরিউ (Wado-Ryu) – আত্মরক্ষামূলক টেকনিক এবং মোশন-ভিত্তিক।
বিভিন্ন দেশে ও অঞ্চলভেদে আরও কিছু সাব-স্টাইল প্রচলিত রয়েছে। এই ভিন্নধর্মী স্টাইলগুলোর কারণেই মূলত কারাতের প্রকারভেদ ও স্টাইল ভিন্ন হতে পারে।
কারাতে শেখার উপকারিতা:
এখন আসি আসল আলোচনায় কারাতে শেখার উপকারিতা ঠিক কী কী? কেনই বা আমার আপনার কারাতে শেখা উচিত, শিখলে লাভ কি, সুবিধা কি কি। একটা বিষয়ে যখন সঠিক তথ্য জানতে পারবেন তখন সেটা নিয়ে শতভাগ সফলতা পাওয়া যায়। তাই নিম্নে কারাতে শেখার উপকারীতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. আত্মরক্ষা ও নিরাপত্তা
বর্তমান সময়ে ছিনতাই, হয়রানি বা হঠাৎ আক্রমণের শিকার হওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। কারাতে শেখার মাধ্যমে আপনি নিজেকে এমন পরিস্থিতিতে রক্ষা করতে পারবেন, তা ছেলে হোক বা মেয়ে।
২. মানসিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি
কারাতে শেখার অন্যতম বড় সুবিধা হচ্ছে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা। প্রতিটি কিক, পাঞ্চ এবং ব্লক আপনার মনের জড়তা ও ভয় কাটিয়ে তোলে।
৩. শারীরিক ফিটনেস উন্নয়ন
কারাতে মানেই অ্যাকটিভ ফিজিক্যাল ট্রেনিং। দৌড়, স্ট্রেচিং, ব্যালেন্স, রিফ্লেক্স – সবকিছু একসাথে কাজ করে শরীরকে সুস্থ ও ফিট রাখতে।
৪. শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা গড়ে ওঠে
কারাতে শিক্ষার প্রতিটি ধাপে থাকে নিয়মানুবর্তিতা ও সম্মান। Sensei-এর প্রতি শ্রদ্ধা, সময়মতো উপস্থিত হওয়া, নিয়মিত অনুশীলন এগুলো জীবনের সব দিকেই প্রভাব ফেলে।
৫. মনোযোগ ও ধৈর্য বৃদ্ধি
আজকের সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মনোযোগের ঘাটতি। কারাতে শেখার সময় কাতা ও কুমিতে মনোযোগ না দিলে ভুল হবেই। ধাপে ধাপে এই অনুশীলন আপনার মস্তিষ্ককে আরও ফোকাসড করে তোলে।
শিশুদের জন্য কারাতে শেখার উপকারিতা:
শিশু বয়সেই যদি কারাতে শেখা শুরু করা যায়, তাহলে তারা ছোট থেকেই শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আত্মবিশ্বাস, ফোকাস এবং ভয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা তৈরি হয়। নিজের প্রতি গড়ে উঠা আত্মবিশ্বাস ভবিষ্যতের জন্য অনেক শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে। তাছাড়া কারাতের কারণে নিয়ম শৃঙ্খলার বিষয় গুলো ও জীবনের অংশ হিসেবে কাজ করতে সহায়ক হবে।

মেয়েদের জন্য কারাতে কেন জরুরি ?
বর্তমান সময়ে নারীদের নিরাপত্তা এখন একটা বড় প্রশ্ন। যেহেতু কারাতে একটা আত্মরক্ষার কৌশল তাই কারাতে শেখার মাধ্যমে মেয়েরা নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে, বিশেষ করে শহরের ব্যস্ত এলাকায় বা রাস্তায় একা চলাচল করার সময় যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে। কারাতে জানার ফলে নিজের মধ্যে একটা আলাদা আত্মবিশ্বাস থাকে, আত্মমর্যাদা বাড়ে তাছাড়া নিজের শরীর ও মন দুটোই সুস্থ থাকে।
কারাতে কত প্রকার জানলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ:
কারাতে শেখার সময় সঠিক স্টাইল বেছে নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই জানতে হবে কারাতে কত প্রকার, এবং কোন স্টাইলটি আপনার লক্ষ্যের সাথে সবচেয়ে ভালো যায়।
যেমন:
- যদি আপনার লক্ষ্য আত্মরক্ষা হয়, তবে Goju-Ryu বা Wado-Ryu ভালো।
- যদি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার ইচ্ছে থাকে, তবে Shotokan বা Shito-Ryu উপযুক্ত।
কারাতে শেখার খরচ ও সময়:
কারাতে শেখা খুব বেশি খরচ সাপেক্ষ নয়। একটি ডোজো বা মার্শাল আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়ে মাসিক ১০০০-২০০০ টাকার মধ্যেই শেখা যায়। সময়ের দিক দিয়ে, কালো বেল্ট অর্জন করতে সাধারণত ৩-৫ বছর লাগে।
FAQ – কারাতে শেখা নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্ন
১. কারাতে শেখা কি কঠিন?
প্রথম দিকে কিছুটা কঠিন মনে হলেও, নিয়মিত অনুশীলনে সহজ হয়ে যায়। একজন ভালো শিক্ষক থাকলে শেখা অনেক সহজ হয়।
২. বয়স বাড়লে কি কারাতে শেখা যায়?
অবশ্যই। কারাতে শেখার জন্য বয়স কোনো বাধা নয়। আজকাল অনেক ৪০+ বয়সী লোকও কারাতে শেখেন ফিটনেস ও আত্মরক্ষার জন্য।
৩. কারাতে শেখার জন্য কি জিমে যাওয়া লাগবে?
না, কারাতে নিজেই একটি পূর্ণাঙ্গ ফিজিক্যাল অনুশীলন। আলাদা করে জিমে যাওয়ার দরকার পড়ে না।
৪. কারাতে শেখা কি শুধু ছেলেদের জন্য?
না। এটি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই সমান উপযোগী। বরং মেয়েদের জন্য এটি অনেক বেশি জরুরি।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে শুধু পড়াশোনা বা পেশাগত উন্নয়নই যথেষ্ট নয়। মানসিক শান্তি, আত্মবিশ্বাস ও আত্মরক্ষা এগুলোর জন্য প্রয়োজন একটি শক্ত ভিত। আর কারাতে শেখা হতে পারে সেই ভিত্তি গড়ার সেরা উপায়।
আপনি নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে চান ও নিজেকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলতে চান সব দিক থেকে তাহলে কারাতে নিঃসন্দেহে হতে পারে আপনার জন্য পারফেক্ট চয়েজ।
আর মনে রাখবেন, শেখার আগে আরো বিস্তারিত জানা দরকার তাহলে সরাসরি কথা বলে নিতে পারেন আপনার নিকটস্থ কোন কারাতে ট্রেনিং সেন্টার থেকে। আপনি চাইলে লুপি কারাতে একাডেমি এর কোচ ও প্রতিষ্ঠার সাথে কথা বলে পরামর্শ নিতে পারেন। যা সম্পূর্ণ ফ্রী তে। কল করুন।